Friday, May 31, 2013

আটলান্টিকে হাড়িয়ে গেল এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট এএফ ৪৪৭- প্রথম পর্ব


২০০৯ এর ৩১শে মে। সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর গ্যালিও বিমান বন্দরে  দীর্ঘ উড়ানের জন্য তৈরী হচ্ছে এয়ার ফ্রান্সের রিও - প্যারিস ফ্লাইট ৪৪৭। প্রায় ১০ ঘন্টা ৩৪ মিনিটের এই ফ্লাইটটির জন্য ব্যবহৃত হবে ইউরোপের বিমান নির্মাতা এয়ারবাসের তৈরী এয়ারবাস এ ৩৩০-২০০ সিরিজের বিমান। অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং অত্যাধুনিক এই বিমানটিতে রিও থেকে প্যারিসে যাচ্ছেন মোট ২১৬ জন যাত্রী। বিমানটিতে মোট ক্রু’র সংখ্যা ১২। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন ক্যাপ্টেন ৫৮ বৎসর বয়েসী মার্ক দ্যুবোঁ, দুজন ফার্ষ্ট অফিসার ডেভিড রবার্ট এবং পিয়েরে সেড্রিক বোনাঁ। এয়ারবাস ৩৩০ বিমানটি পরিচালনায় দু’জন পাইলটই যথেষ্ট কিন্তু এয়ার ফ্রান্সের নিয়ম হচ্ছে ১০ ঘন্টার বেশী সময় ধরে বিমান পরিচালনা করতে হলে একজন রিজার্ভ পাইলট থাকতে হবে। ডিপারচার গেটে অপেক্ষা সময় সহ ফ্লাইট ৪৪৭ এর মোট পরিচালনা সময় হচ্ছে প্রায় ১৩ ঘন্টা, তাই ৩৭ বৎসর বয়েসী ফার্ষ্ট অফিসার ডেভিড রবার্ট রিজার্ভ পাইলট হিসেবে উপস্থিত আছে। বিমান উড়ার প্রথম ৫/৬ ঘন্টা সে  বিমান ক্রুদের বিশ্রামের জায়গার একটি সীটে বসে বিশ্রাম নেবে এরপর ককপিটে এসে ৫৮ বৎসর বয়েসী ক্যাপ্টেন মার্ক দ্যুবোঁকে বিশ্রামে পাঠাবে। ক্যাপ্টেনের বিশ্রাম শেষে অপর ফার্ষ্ট অফিসার পিয়েরে সেড্রিক বোঁনা বিমান পরিচালনার দায়ীত্ব হস্তান্তর করে বিশ্রামে যাবে। দীর্ঘ সময় ধরে বিমান পরিচালনার যে ধকল তা থেকে পাইলটদের কিছুটা রক্ষা করার জন্য এই বিশ্রামের প্রয়োজন অনেক বেশী। তবে এয়ারবাসের অত্যাধুনিক এই ৩৩০ বিমানটিতে পাইলটদের কাজ অনেকটাই সহজ হয়েছে কারন বিমান উড্ডয়ন পরবর্তী বেশীর ভাগ সময় ধরেই বিমান পরিচালনার দায়ীত্ব থাকে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত অটো পাইলটের হাতে। অটো পাইলট এক ধরনের যান্ত্রিক ব্যবস্থা যা নিয়ন্ত্রিত হয় অসংখ্য মাইক্রোপ্রসেসর এবং স্যাটেলাইট ভিত্তিক গ্লোবাল পজিশনিং সিষ্টেমের সহায়তায়।

বিমানের যাত্রীদের মধ্যে বেশীরভাগই ফরাসী, ব্রাজিলিয়ান এবং জার্মান। তবে আরও ৩০টি দেশের যাত্রী ফ্লাইট ৪৪৭ যোগে প্যারিস যাচ্ছেন আজ।  বিশ্বের অন্যতম এয়ার লাইন্স এয়ার ফ্রান্স তার নিরাপদ বিমান পরিচালনা রেকর্ডের জন্য সমগ্র বিশ্বেই জনপ্রিয়। এই সংস্থার পাইলট ও কেবিন ক্রুদের সুনাম বিশ্ব জুড়ে। তাই ২১৬ জন যাত্রী বিমানটিতে আসন গ্রহন করেছেন এই বিশ্বাসে যে নির্ধারিত সাড়ে দশ ঘন্টা পরে তাঁরা নিরাপদে প্যারিসের দ্যা গল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরন করবেন।

যাত্রা প্রস্তুতিকালে ফার্ষ্ট অফিসার বোনাঁ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছিল। ক্যাপ্টেন দ্যুবোঁ তাঁর আসনে বসতেই বোনাঁ সর্বশেষ আবহাওয়া রিপোর্ট সম্বন্ধে জানালো;

- ক্যাপ্টেন, আমাদের যাত্রাপথে আবহাওয়া খুবই খারাপ। মধ্য আটলান্টিকের উপর প্রচন্ড ইলেকট্রিক ঝড় দেখা যাচ্ছে। এমনকি আমাদের জন্য নির্ধারিত ৩৫০০০ ফিট উপরেও বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে এই করিডোরের অনেক বিমান তাদের ফ্লাইট প্ল্যান পরিবর্তন করে অন্য করিডোর ব্যবহার করছে।

ক্যাপ্টেন দ্যুবোঁ বললেন;

-  মনে হচ্ছে এবারের বিমান পরিচালনা আমাদের সবার জন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবে চিন্তার কিছুই নেই। আমাদের রয়েছে পৃথিবীর সবচাইতে নিরাপদ বিমান এবং আমরা হচ্ছি সবচেয়ে দক্ষ ক্রু। সুতরাং চলো আমরা রওয়ানা দি।

ব্রাজিল সময় সন্ধ্যা ৭:২০ মিনিট। গ্যালিও বিমান বন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ফ্লাইট ৪৪৭কে বিমান বন্দর ত্যাগ ও উড্ডয়নের অনুমতি দিলেন।

৭:২৯ মিনিট। এয়াবাস এ ৩৩০-২০০ বিমানটি সাবলীলভাবে বিমান বন্দরের রানওয়ে ত্যাগ করে আকাশে উঠে এল। ব্রাজিলিয়ান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বিমানটির জন্য ৩৫০০০ ফিট উচ্চতা বেঁধে দিয়েছে। ব্রাজিলিয়ান এয়ার স্পেস ত্যাগ করা পর্যন্ত বিমানটি প্রথমে ব্রাজিলের আটলান্টিক কন্ট্রোল এবং পরবর্তীতে সেনেগালের ডাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে রিপোর্ট করবে। সেনেগালের পর বিমানটি কেপ ভার্দে এয়ার স্পেস হয়ে ফ্রান্স এয়ার স্পেসে প্রবেশ করলে তার দায়ীত্ব নেবে ফ্রান্স এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল। যাত্রা পথের অধিকাংশ সমযই বিমানটি তার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখবে। তবে মধ্য আটলান্টিকের একটি অংশ কমিউনিকেশন ডেড জোন হওয়ার কারনে প্রায় দু ঘন্টা বিমানটির সাথে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন থাকবে। দু ঘন্টা নিশ্চুপ থাকার পর বিমানের কমিউনিকেশন অফিসার সেনেগালের ডাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে বিমানটির অবস্থান জানাবে এবং ডাকারের অনুমতি প্রাপ্তি সাপেক্ষে কেপ ভার্দে এয়ার স্পেসের দিকে এগিয়ে যাবে।

ব্রাজিল সময় রাত ৮.৩০ এবং কোঅর্ডিনেটেড ইউনিভার্সাল টাইম  ২২.৩০ মিনিট; ফ্লাইট ৪৪৭ তার জন্য নির্ধারিত ৩৫ হাজার ফিট উপরে উঠে এসেছে। আবহাওয়া প্রচন্ড ঝন্জাবহুল হওয়ায় ক্যাপ্টেন সীট বেল্ট খোলার সংকেত দিলেন না তবে মেইন ও ব্যাক কেবিনের ক্রুরা রাতের খাবার পরিবেশন শুরু করলো। আটলান্টিক মহাসাগরের ৩৫ হাজার উপর দিয়ে বিমানটি প্রায় সারা রাত উড়বে। সুতরাং ভরপেট রাতের খাবারের পর যাত্রীবৃন্দ এমনকি কেবিন ক্রুরাও কিছুটা ঘুমিয়ে নিতে পারবে। তবে দুর্দান্ত আবহাওয়ার কারনে সৃষ্ট টার্বুলেন্স যাত্রীদের জন্য অস্বস্তির কারন হতে পারে।

রাত ২৩:৩০ মিনিট। ক্যাপ্টেন  দ্যুবোঁ অটো পাইলট চালু করলেন। এখন থেকে প্যারিস দ্য গল বিমান বন্দরের বিকন সংকেত বিমান কর্তৃক গ্রহন পর্যন্ত বিমান পরিচালনার সম্পুর্ন দায়ীত্ব এই অটো পাইলটের। দুজন পাইলটের একজন এ সময়ে বিমানের ককপিটে অবস্থিত মনিটরগুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন আর অপর জন্য ব্যস্ত থাকবেন যাত্রা পথে অবস্থিত নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের সাখে রেডিও যোগাযোগের মাধ্যমে। রেডিও যোগাযোগ ছাড়াও আরেকটি যোগাযোগ ব্যবস্থা বিমানটিতে সার্বক্ষনিকভাবে কাজ করছিল। এ হচ্ছে অ্যাকারস বা অটোমেটেড কমিউনিকেশন এড্রেসিং অ্যান্ড রিপোর্টিং সিষ্টেম। এটি প্রতি দশ মিনিট পরপর একটি করে বার্তা প্যারিসস্থ এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট কন্ট্রোল সেন্টারে প্রেরন করছিল। এই বার্তার মাধ্যমে এয়ার ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট ৪৪৭ এর অবস্থান এবং বিমান রক্ষানাবেক্ষন বিষয়ক তথ্য জানাতে পারছিল। অ্যাকারস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ও প্রয়োজনীয় একটি ব্যবস্থা কারন উড়ন্ত অবস্থায় বিমানের কোন যন্ত্রাংশ কাজ না করলে বা সমস্যা সৃষ্টি করলে সে সম্বন্ধে অগ্রীম তথ্য অ্যাকারসের মাধ্যমে পাওয়া যায় বিধায় বিমান আকাশে থাকতেই সমস্যা সৃষ্টিকারী যন্ত্রাংশ মেরামত বা বদলে ফেলার ব্যবস্থা গ্রহন করা যায়।

ভোর ১: ৩৫ মিনিট; ক্যাপ্টেন দ্যুবোঁ ব্রাজিলিয়ান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানালেন যে তিনি তাঁর ওয়েপয়েন্ট ইনটলে পৌছে গেছেন। ইনটল হচ্ছে ব্রাজিলের উত্তর পূর্ব উপকুলীয় শহর নাটাল থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ওয়েপয়েন্ট বা আকাশের একটি অবস্থান যেখানে ব্রাজিলের আকাশ সীমা শেষ হয়েছে। ইনটল অতিক্রম করার পর ব্রাজিলিয়ান কন্ট্রোলের নির্দেশে ক্যাপ্টেন আটলান্টিক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে তাঁর অবস্থান ও গতিপথ সংক্রান্ত তথ্য দিলে আটলান্টিক কন্ট্রোল ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতা বজায় রেখে নির্ধারিত গন্তব্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার অনুমিত দিল।

ভোর ১:৪৮ মিনিট. ফ্লাইট ৪৪৭ ব্রাজিলিয়ান আকাশ সীমা অতিক্রম করে মধ্য আটলান্টিকে কমিউনিকেশন ডেড জোনে প্রবেশ করল ফলে বিমানটি তার উপর লক্ষ্য রাখা সবগুলো রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মধ্য আটলান্টিকের এই অংশে কোন ধরনের ইলেকট্রনিক ওয়েভ প্রবেশ করতে পারে না বিধায় সব ধরনের রেডিও যোগাযোগ বন্ধ থাকে ফলে কোন রাডার থেকেই বিমানের উপর লক্ষ্য রাখা সম্ভভ হয় না। ফ্লাইট ৪৪৭ আটলান্টিকের এই অন্চলটি দিয়ে প্রায় দু ঘন্টা কোন রকমের রেডিও যোগাযোগ ছাড়া উড়বে এবং আফ্রিকার সেনেগাল এর আকাশ সীমায় প্রবেশ করার সাথে সাথে ডাকারস্থ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সাথে রেডিও যোগাযোগ স্থাপন করবে। পৃথিবীর দুই প্রান্ত থেকে বয়ে আসা বাণিজ্য বায়ূ মধ্য আটলান্টিকের এই অন্চলটিতে মিলিত হয় ফলে এখানে সবসময় প্রচন্ড বিদ্যুৎবাহী ঝড় বইতে থাকে। বিমান চলাচলের জন্য এই অন্চলটি অত্যন্ত বিপদজনক বিধায় অনেক এয়ার লাইন্স তাদের বিমান অন্য কডিডোর দিয়ে পরিচালনা করে। তবে অত্যাধুনিক এয়ারবাস এ ৩৩০-২০০ এর জন্য এ ধরনের ঝন্জাবহুল আবহাওয়া খুব একটা বিপদজনক নয় কারন এই বিমানটির অ্যারোডায়নামিকস এ ধরনের আবহাওয়ার জন্য উপযোগী এবং দুটি জেনারেল ইলেকট্রিকস ইন্জিন এত শক্তিশালী যে প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যেও বিমানটি সাবলীলভাবে উড়তে সক্ষম।

ইউটিসি সময় ভোর ৪.০০টা। ফ্লাইট ৪৪৭ এর রেডিও যোগাযোগের জন্য অপেক্ষারত সেনেগাল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের একজন অপারেটর বিমানটির সাথে রেডিও যোগাযোগের চেষ্টা করল;

- এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট এএফ ৪৪৭, ডাকার থেকে বলছি, দয়া করে যোগাযোগ কর।

বেশ কবার রেডিও যোগাযোগের চেষ্টা চালাবার পর বিমানটি থেকে কোন ধরনের সাড়া না পাওয়ায় ডাকার কন্ট্রোল প্যারিসস্থ এয়ার ফ্রান্স এর প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করে ফ্লাইট ৪৪৭ এর সাথে যোগাযোগ  ব্যর্থতার তথ্যটি জানাল।

ব্রাজিলের গ্যালিও বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় থেকেই ফ্লাইট ৪৪৭ এয়ার ফ্রান্সের প্যারিসস্থ ফ্লাইট অপারেশন সেন্টারের সাথে অ্যাকারসের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছিল। ইতোমধ্যে ফ্লাইট ৪৪৭ থেকে মোট ২৪টি বার্তা এসেছে। এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট অপারেশন সেন্টার লক্ষ্য করলো, বিমানটি কমিউনিকেশন  ডেড জোনে প্রবেশ করার পরও অ্যাকার্স এর মাধ্যমে বার্তা প্রেরন করেছে। তাই একজন অপারেটর বিমানটির সিষ্টেমে একটি বার্তা পাঠালেন। কিন্তু বার্তাটি সাথে সাথে ফেরৎ এল এবং অ্যাকারস জানালো যে প্রাপককে পাওয়া যাচ্ছে না। এটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক একটি ঘটনা বিধায় অপারেটর এয়ার ফ্রান্স হেডকোয়ার্টারকে ফ্লাইট ৪৪৭ নিখোজের বিষয়টি জানালেন।

১লা জুন ২০০৯, সকাল হতে না হতেই সমগ্র বিশ্ব এয়ার ফ্রান্সের এই বিমান নিখোজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারল। বাণিজ্যিক বিমান চলাচল ইতিহাসে এটি ছিল একটি বিষ্ময়কর ঘটনা। সমগ্র বিশ্বই অবাক হয়েছিল এই ভেবে যে একটি অত্যাধুনিক ও নিরাপদতম বিমান বিশ্বের সবচাইতে কুশলী পাইলটদের নিয়ন্ত্রনে থাকা অবস্থায় কি ভাবে নিখোঁজ হয়।

১লা জুন সকালে আটলান্টিকের উভয় প্রান্তে ব্রাজিল ও ফ্রান্সের উদ্যোগে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৪৭ এর জন্য অনুসন্ধান শুরু হয়। পরবর্তীতে ষ্পেন ও যুক্তরাষ্ট্র এই অনুসন্ধানে যোগ দেয়।

এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট এএফ ৪৪৭ মধ্য আটলান্টিকে বিধ্বস্ত হয়েছে এই অবিশ্বাস্য সংবাদে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং একটি প্রশ্নই সবার মনে আসে অত্যাধুনিক একটি বিমান অত্যন্ত দক্ষ ক্রুদের পরিচালনায় উড্ডয়নরত অবস্থায় কোন ধরনের সংবাদ না দিয়েই কিভাবে বিধ্বস্ত হয়। অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে হয়তো বিমানে পেতে রাখা কোন বোমার বিস্ফোরনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেকেই বলতে থাকেন, বিমানটির যাত্রাপথের প্রচন্ড ঝড় বিমানটিকে হঠাৎ করে দু টুকরো করে ফেলায় কোন কিছু বোঝার আগেই তা আটলান্টিক সমুদ্রে পরে তলিয়ে গেছে। এএফ ৪৪৭ এর পরিনতি নিয়ে যে যাই  ভাবুক না কেন, নিশ্চিতভাবে তার নিখোজ হওয়ার কারনটি বলার মত কোন তথ্যই কারও কাছে ছিল না।

১লা জুন ২০০৯ বিকেলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই সারকোজি সরকারীভাবে ফ্লাইট ৪৪৭ দুর্ঘটনার কথা প্রকাশ করলেন এবং যাত্রী ও ক্রু সহ বিমানটির মোট ২২৮ জন আরোহীর মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেন।

২রা জুন ২০০৯ সকালে ব্রাজিল ও ফ্রান্সের উদ্যোগে মধ্য আটলান্টিকে ফ্লাইট ৪৪৭ এর সম্ভাব্য সর্বশেষ অবস্থানে ব্যপক তল্লাশী অভিযান শুরু হল। ব্রাজিলিয়ান বিমান বাহিনীর বিমানগুলো ফারনাডো ডি নরনহা আর্কিপেলেগো অন্চলে এবং সেনেগালস্থ ফরাসী বিমান ঘাটি থেকে ফরাসী যুদ্ধ বিমান সমূহ ডাকার উপকুলে  অনুসন্ধান শুরু করল। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি সাবমেরিন প্যাট্রল বিমান পি ৩ অরিয়ন এবং ষ্পেনীয় বিমান বাহিনীর একটি কাসা-২৩৫ সামুদ্রিক পেট্রোল বিমান এই অনুসন্ধানে যোগ দিল।

২রা জুন ইউটিসি সময় বিকাল তিনটা বিশে ব্রাজিলীয় বিমান বাহিনীর একটি বিমান সমুদ্রে একটি বিমানের ধংসাবশেষ  চিন্হিত করে। এই দিন বিকেলে ব্রাজিলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফ্লাইট ৪৪৭ এর দূর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ব্রাজিলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হোসে আলেসকার তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষনা করেন।



দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্ত